মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সীমান্তে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ, খতিয়ে দেখবে বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট – কক্সবাজারের ঘুমধুম সীমান্তবর্তী অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছে, সেখানকার নো ম্যানস ল্যান্ডে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করছে মিয়ানমার। তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে স্থানীয় আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের উদ্ধৃত করে এই খবর দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের উদ্বেগকে উপেক্ষা করে ওই নির্মাণ কাজ চলছে। আনাদোলুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ঘটিয়ে ওই স্থাপনা নির্মিত হলে এলাকার তমব্রু খালের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হবে। তৈরি হবে বন্যার ঝুঁকি। এতে অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের বন্যার কবলে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়েছে, ঘটনায় উদ্বিগ্ন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়কে বিষয়টি জানিয়েছে। বিজিবি কতৃপক্ষ আনাদোলুকে জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে পাওয়া খবরটির সত্যতা যাচাই করছে তারা।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত (ফাইল ফটো)

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত (ফাইল ফটো)
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের মধ্যবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়। পরে বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিলেও অনেকেই সেখানে অস্থায়ী বাড়িঘরে থেকে যায়। মিয়ানমারের স্থাপনা তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের তাড়াতে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার বাহিনীকে তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে। তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু খবর দিয়েছে, নো ম্যানস ল্যান্ডে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করছে মিয়ানমার। এতে ওই এলাকায় রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য অনুপোযোগী হয়ে পড়বে। নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গা নেতাদের অভিযোগ, তাদেরকে উচ্ছেদে বাধ্য করতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ আনাদোলু এজেন্সির কাছে অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য নতুন এ কৌশল নিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার, নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার এবং মূল জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার আশা নিয়ে আমরা এখানে আছি।’ তার দাবি, শুরু থেকেই নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের তাড়াতে তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে আনাদোলু জানায়, কক্সবাজারের ডেপুটি কমিশনার কামাল আহমেদ মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে নো ম্যানস ল্যান্ডে নির্মাণ কাজ চলা নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। কামাল আহমেদ ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মিয়ানমার সরকার নো ম্যানস ল্যান্ডে কোনও স্থাপনা তৈরি করতে পারে না। স্থাপনাটি তৈরি হলে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে এবং নো ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা দুর্ভোগের মুখে পড়বে।

মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা (ফাইল ফটো)

মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা (ফাইল ফটো)
বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান আনাদোলু এজেন্সিকে জানান, তিনি সম্প্রতি ব্যক্তিগতভাবে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সে সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাকে জানিয়েছে, সেখানে কংক্রিটের অবকাঠামো নয়, বরং কাঁটা তারের বেড়া স্থাপন করা হচ্ছে। ‘এ ধরনের কাঁটাতারের বেড়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী অন্যান্য সীমান্তরেখায়ও স্থাপন করা হয়েছে।‘ বলেন তিনি।
কর্নেল হাসান আনাদুলুকে বলেছেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ও সংক্রান্ত প্রতিবেদন নজরে এলেও কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের বিষয় সম্পর্কে এখনও তিনি নিশ্চিত নন। তিনি জানিয়েছেন, এর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গবেষণাকর্মে নিয়োজিত রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আখন্দ।২০১৮ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার ‘রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের বই। নো ম্যানস ল্যান্ডে মিয়ানমারের স্থাপনা নির্মাণে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি ধরিয়ে দিয়ে তিনি আনাদোলু এজেন্সিকে বলেছেন, ‘সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হওয়া ছাড়া কোনও দেশই নো ম্যানস ল্যান্ডে কোনও নির্মাণ কাজ চালাতে পারবে না। দেশের বাইরে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনকেও হুমকিতে ফেলার চেষ্টা করছে মিয়ানমার, যা খুব দুর্ভাগ্যজনক।’

আরও খবর